• শনিবার, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ বৈশাখ ১৪২৯

যোগাযোগ

১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী সড়কের বেহাল দশা, ঝুঁকি নিয়ে চলছে যানবাহন

  • অনলাইন ডেস্ক
  • প্রকাশিত ১০ জুন ২০২৩

আকরামুজ্জামান আরিফ, কুষ্টিয়া: 
১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী আঞ্চলিক সড়কের কুমারখালী বাস ষ্ট্যান্ড গোল চত্বর সংস্কারের মাত্র এক মাসের মাথায় ফের দেবে যেয়ে ভেঙ্গে চুরে চুরমার হয়ে গেছে। ফলে ভাঙ্গা চুরা দেবে যাওয়া সড়ক দিয়ে ঝুকি নিয়ে চলাচল করছে ভারি ও হালকা পরিবহন। কুমারখালী বাস ষ্ট্যান্ড গোল চত্বর এলাকা চার থেকে পাঁচটি স্থানে প্রায় আধাহাত গভীর ও দুই থেকে তিন ’শ মিটার দৈর্ঘের সরু নালা সৃষ্টি হয়েছে। এ নিয়ে সড়কটি নির্মাণের পর একই স্থানে অন্তত ৮ থেকে ১০ বার সংস্কার ও দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। রাস্তার এমনই বেহাল দশা হয়েছে চলতে যেয়ে হুচট খেয়ে ছিটকে পড়ছে পাঁয়ে হাঁটা পথচারীরাও। তবুও নিত্যপ্রয়োজন মেটাতে ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছে মানুষ।
স্থানীয়দের ভাষ্য, পাকা সড়কের নিচের অংশে নির্মাণ কাজে অনিয়ম ছিল। সেখানে থলথলে কাঁদা জমেছে। সেজন্য বছরে কয়েকবার দেবে যাচ্ছে সড়কের গোলচত্বর এলাকা।
এদিকে চলাচলে অযোগ্য হয়ে পড়া সড়কটি দ্রুত মেরামত করার জন্য সড়ক ও জনপথ বিভাগ কুষ্টিয়া উদ্যোগ নিলেও তা করতে পারেনি। স্থায়ী সমাধানের জন্য বার বার দেবে যাওয়া কুষ্টিয়া—রাজবাড়ী আঞ্চলিক মহাসড়কের সংস্কার কাজ বন্ধ করে দিয়েছেন কুমারখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পৌরসভার মেয়র মোঃ সামছুজ্জামান অরুন।
বৃহস্পতিবার (৮ জুন) সকাল ১০টার দিকে মহাসড়কের কুমারখালী বাসস্ট্যান্ড সংলগ্ন গোলচত্বর এলাকায় গিয়ে সংস্কার কাজ বন্ধ করে দেন তিনি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে ওই আঞ্চলিক মহাসড়কটি নির্মাণ করে মেহেরপুর জেলার ঠিকাদার জহুরুল ইসলাম কনস্ট্রাকশন। ২০১৮ সালে সড়কটির পুনর্নির্মাণ হয়েছিল। সড়কটি দেবে গেলে ২০২০ সালের জুন মাসে প্রথম সংস্কার কাজ শেষ করে ঠিকাদার। ২০২১ সালে জুন মাসে ফের দেবে যাওয়া অংশ সংস্কার করা হয়। ২০২২ সালে কয়েকবার একইস্থানে আবার সরু খাল ও গর্ত সৃষ্টি হলে তা সংস্কার করা হয়। সর্বশেষ ৪ মে সংস্কার কাজ করা হয়। বর্তমানেও একই স্থানগুলো দেবে স্বাভাবিক চলাচল ব্যাহত হচ্ছে।
মেয়র সামছুজ্জামান অরুন বলেন, বার বার একই জায়গায় সড়ক দেবে যাচ্ছে, আর সড়ক বিভাগ সংস্কার করছে। এতে সরকারি টাকার অপচয় হচ্ছে। আবার বার বার জনদুর্ভোগ সৃষ্টি হচ্ছে। এবারও যেনতেনভাবে সংস্কার কাজ চলছিল। স্থায়ী সমাধানের জন্য এ কাজ বন্ধ করে দিয়েছি।
তার দাবি, প্রকৌশলী এসে জনগণকে স্থায়ী সমাধানের জন্য আশ্বস্থ করলেই তিনি কাজ করতে দিবেন। তিনি বলেন, সোমবার ( ৬ জুন) সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গোলচত্বর সংলগ্ন পশ্চিম ও উত্তর পাশের ৪ — ৫ টি স্থানে সড়ক দেবে কয়েকটি সরু খাল ও ছোট বড় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে। টানা পা করে চলাচল করছে পথচারীরা। ঝুঁকি নিয়ে চলছে হরেকরকম যানবহন। সেগুলো উল্টে যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা। ঝুঁকি এড়াতে অনেক বোঝায় যানবাহন ট্রাফিক আইন ভেঙে উল্টোপথে চলছে। এছাড়াও সড়কের টোলপ্লাজা, আলাউদ্দিননগর, কাজীপাড়া মোড়, মোড়াগাছা এলাকারও কয়েকটি স্থানে দেবে গেছে সড়ক।
এসময় ইজিবাইক (অটো) চালক মান্নান বলেন, কয়দিন আগেই সারল ( মেরামত করা)। আবারো দেবে খাল হয়ে গেছে। বছরে কয়েকবার এমনভাবে সড়ক দেবে যায়। খুব ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন তাঁরা। তাঁর ভাষ্য, কাজে অনিয়ম থাকায় নিচে গলন ( থলথলে কাঁদা) সৃষ্টি হয়েছে। সেজন্য বারবার একই স্থান দেবে যাচ্ছে।
সেলোইঞ্জিন চালিত এক করিমন গাড়ি চালক মমিন আলী বলেন, তাঁর গাড়িতে গোখাদ্য ছালের বস্তা রয়েছে। ওইপাশের রাস্তা ভাঙা। সেজন্য তিনি আইন ভেঙে ভাল পথ দিয়ে গেলেন।
স্থানীয়রা বলেন, অপরিকল্পিতভাবে সংস্কারের কারণে বারবার দেবে যাচ্ছে সড়ক। নষ্ট হচ্ছে টাকা। সেখানে প্রায় ছোট — বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। দুর্ঘটনা ও ঝুঁকি কমাতে স্থায়ী সমাধানের দাবি জানান তারা।গোলচত্বর এলাকার মুদি দোকানি সুভাষ চন্দ্র বলেন, প্রতিদিনই দুর্ঘটনা ঘটছে। বারবার দোকান ফেলে ছুটে যান তিনি। কখন যেন দোকানের ভিতরে গাড়ি চলে আসে এই ভয়ে থাকেন তিনি।
সড়ক ও জনপদ (সওজ) বিভাগ কুষ্টিয়া ও স্থানীয়দের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রায় ১৯০ কোটি টাকা ব্যয়ে এই আঞ্চলিক মহাসড়কের কাজের ঠিকাদার মেহেরপুরের জহুরুল ইসলাম। ২০১৮ সালে সড়কটির পুননির্মাণ করা হয়েছিল।
কুমারখালী পৌরসভার ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর এস এম রফিক বলেন, গোল চত্বর এলাকাটি মরণ ফাঁদে পরিনিত হয়েছে। নির্মাণের পর থেকে প্রায় আট থেকে দশবার একইস্থানে সড়ক দেবে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। তাঁর ভাষ্য, কাজে অনিয়ম থাকায় নিচের অংশে পানি জমে থলথলে কাঁদা জমে গেছে। স্থায়ীভাবে সংস্কারের পাশাপাশি অনিয়মের বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখার দাবি জানান তিনি।
কুষ্টিয়া সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ সেলিম আজাদ খাঁন বলেন, কাজে কোনো অনিয়ম নেই। মহাসড়কে স্থানীয়দের দাবির প্রেক্ষিতে স্প্রিডব্রেকার দেওয়া হয়েছে। সেখানে অতিরিক্ত বোঝায় যানবাহন গুলো হার্ডব্রেক করছে। আর এতেই বারবার সড়ক দেবে যাচ্ছে আর সংস্কার করা হচ্ছে। তিনি সড়কের দেবে যাওয়া গুলো পরিদর্শন করেছেন। ঠিকাদার নিয়োগের মাধ্যমে খুব দ্রুতই স্থায়ীভাবে সমস্যার সমাধান করবেন তিনি।

 

আরও পড়ুন



বাংলাদেশের খবর
  • ads
  • ads